আবু মোরশেদ চৌধুরীঃ
আজ মাতাময়ী নদী বাঁকখালী কক্সবাজার সদরের প্রাণকে গণধর্ষণে যাঁরা লিপ্ত তাদেরও একটা কলঙ্কিত ইতিহাস প্রজন্ম লিপিবদ্ধ করবে নিশ্চয়ই সময়ের কাঠগড়ায় তাদের হয়তো দাঁড়াতে হবে। হয়তো তারা বাঁকখালীর যৌবন দেখেননি, দেখেনি এই জনপদে তার অবদান। তার যৌবন, জনস্বার্থে অকৃত্রিম পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি যারা ষাটের দশকে এই জনপদে এই শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। আজ যারা অতি লোভের বশবর্তী হয়ে মাতাময়ী বাঁকখালীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করছেন তারা একবারও ভেবেছেন এর পরিণাম কি ভয়াবহ হতে পারে?কোন পর্যায়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে! বাকখালীর নাব্যতা নষ্ট হওয়ার ফলে এমনিতেই দীর্ঘ একদশকেরও অধিক সময় ধরে পৌর এলাকার বিশাল একটি অংশের জনগণ লবণাক্ত পানির প্রকোপে বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাবে অতিষ্ঠ। এর উপর নদী সংকোচনের মহাউৎসব! বাঁকখালীর যৌবনের উদ্যমতা আমি দেখেছি, দেখছে সতীর্থরা, দেখেছেন আমার ঐ সময়ের পূর্বজ। শুধু দশ পয়সা দিয়ে কস্তুরাঘাট থেকে ওপারে (খুরুশকুল) খেয়া পারাপার হয়নি বরং বিআইডব্লিউটি এ এর ঘাটে নোঙ্গর করা জাহাজ সন্দ্বীপ-হাতিয়া রামগতি নামের জাহাজে চড়ে পাড়ি জমিয়েছি গ্রামের বাড়ি সহ সদরঘাট চট্টগ্রাম বন্দরে। মনে হচ্ছে সেই কয়দিন আগের দৃশ্য কস্তুরাঘাট এর কাঠের জেটিতে বসে বসে খোলা বরশি দিয়ে মাছ ধরা। বাঁকখালীর শাখাা নদীর বিস্তৃতি ছিল পেশকার পাড়া হয়ে চাউল বাজার পর্যন্ত। ভরা জোয়ারের পানি চলে আসতো পেসকারপাড়া হলে চাউল বাজার অবধি। যার বুক চিরে চট্টগ্রাম থেকে চাউল বাজার ঘাটে ব্যাবসায়িক পন্য নিয়ে ভিড় জমাতো পণ্যবাহী বড় বড় সাম্পান। তাছাড়া চকরিয়া, পেকুয়া, মগনামা,বদরখালী থেকে নিয়ে আসা হতো বড় বড় সাম্পান করে উপকূলীয় অঞ্চলের জমিদারদের ধান এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী । বৃটিশ আমলে বার্মার বাণিজ্য জাহাজও এ ঘাটে নোঙর ফেলতো।
ততকালীন কক্সবাজার মহকুমার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সভ্যতা মুলতঃ গড়ে উঠার প্রধান সহায়ক ছিল বাঁকখালী নদী।
কালের পরিক্রমায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের উদাসীনতায় বাঁকখালী নদীর দুপাশ আজ দখলদারের কবলে। সময়মত নদী সুরক্ষা না করার পরিনাম হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে রামুসহ বাকখালী সংলগ্ন এলাকায় বন্যাসহ নানান জলাবদ্ধতা,বন্যা, ফসলি জমির চরম ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন। পৌরএলাকায় লবণাক্ততা। হয়তো সেই দিন বেশি দূরে নয় বাকখালী অবহেলার মাশুল দিতে হবে কক্সবাজার সদরের সকল স্তরের জনগণকে। পরিবেশ হুমকিতে পড়তে পারে পুরো শহর এবং এর অবকাঠামো। বুঝতে হবে অথবা বিজ্ঞজনের কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে নদীর পাড়ে প্যারাবন কেন সৃষ্টি করা হয় এবং তা নিধনের ফলে কি নেতিবাচক প্রভাব এলাকায় পড়তে পারে। বাঁকখালীর দূধারে প্যারাবন না থাকলে হুমকির মুখে পড়তে পারে খুরুসকুলে গড়ে উঠা বহুতল বিশিষ্ট আশ্রায়ন প্রকল্পসহ নানান অবকাঠামো সমূহ। ভুলে গেলে চলবে না প্রকৃতিকে প্রাকৃতিক উপায়ে সুরক্ষিত করতে হবে। আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত বিশ্ব দরবারে অবিরাম সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।অপরদিকে আমরা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য করছিটা কি? মনে রাখতে হবে দেশটা কোন গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থ রক্ষার জন্য সৃষ্টি হয়নি।
আবু মোরশেদ চৌধুরী
সভাপতি, কক্সবাজার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।